বাংলাদেশি কানাডীয়ানদের পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর) সিল’ পাওয়া নিয়ে প্রবাসীদের উদ্বিগ্ন ও বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে টরন্টোয় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাইমউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, টরন্টোর কনস্যূলেট অফিস তিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে ‘নো-ভিসা রিকোয়ার্ড সীল’ প্রাপ্তি নিশ্চিত করছে।
কনসাল জেনারেল স্পষ্টভাবে বলেন, নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিল’ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পরিষ্কার নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালায় এই সিল পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের উল্লেখ আছে। কন্স্যুলেটের ওয়েব সাইটে (www bdcgtoronto.ca) উল্লেখিত তালিকার যে কোনো একটি ডকুমেন্ট থাকলেই আবেদনকারী নো-ভিসা সিল পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন। তিনি বলেন, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে নিজ দেশে যান।তারা যাতে ভিসা ছাড়াই নিজ দেশে যেতে পারেন সে জন্য সরকার নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিলের নিয়মবালী সহজ করেছে। পুরো নিয়মাবলী অনলাইনে দেয়া আছে।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’র আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই তথ্য জানান।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘টরন্টোর কনস্যুলেট কী করছে’ শীর্ষক এই আলোচনায় কনসাল জেনারেল নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিল পাওয়া’ নিয়ে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশি কানাডীয়ানদের এই উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে কনসাল জেনারেল নাইমউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নো-ভিসা রিকোয়ার্ড সিলের’ ব্যাপারে সরকারের পরিষ্কার নিয়ম দেয়া আছে। আমরা চাইলেই সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে পারি না। কাউকে নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে তার জন্য তদন্ত হতে পারে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে,কিন্তু কাউকে ফিরিয়ে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, যাদের হালনাগাদ বাংলাদেশি পাসপোর্ট নাই, তারা সরকারের নির্দিষ্ট করে দেয়া যে কোনো একটি ডকুমেন্ট জমা দিয়ে পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড সিল’ পেতে পারেন। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন- সেই জন্য সরকার অনেকগুলো বিকল্প দিয়ে রেখেছে।
কনসাল জেনারেল নাইমউদ্দিন জানান, তিন বছরেরও কম সময়ে টরন্টোর কনস্যুলেট অফিস পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজড কনস্যুলার সেবা শুরু করেছে। ফলে কোনো ধরনের কনস্যূলার সেবার জন্য আবেদন করার পর থেকে প্রতিটি ধাপের অগ্রগতি তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনে দেখতে পারেন এবং ই-মেইল নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জেনে যান। টরন্টোর কনস্যুলেট থেকে ১৫ ধরনের কনস্যুলার সেবা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কনসাল জেনারেল জানান, কেবলমাত্র টরন্টো বা বৃহত্তর টরন্টো এলাকাই নয় কানাডার পাঁচটি প্রভিন্সে বসবাসরত বাংলাদেশি কানাডীয়ানদের এই কনস্যুলেট অফিস থেকে কনস্যুলার সেবা দেয়া হয়। অন্টারিওর বাইরে ব্রিটিশ কলম্বিয়া, ম্যানিটোবা, সাসকাচুয়ান এবং আলবার্টা প্রভিন্স এই কনসূলেটের আওতাভূক্ত। এর বাইরে যে কোনো স্থান থেকে কেউ সেবা চাইলে টরন্টো কনসূলেট অফিস তাদেরকেও সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
নাইমউদ্দিন আহমেদ জানান, গত জুন থেকে টরন্টো কনস্যূলেট থেকে নতুন পাসপোর্ট, পাসপোর্টের নবায়ন পুরোদমে হচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ই- পাসপোর্ট চালুর লক্ষ্য নিয়ে কনস্যুলেট কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে কনসাল জেনারেল বলেন, টরন্টো কনস্যুলেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যূর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো কিন্তু করোনার কারনে সেটি পিছিয়ে গেছে। শিগগিরই এই ব্যাপারে অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তিন বছরে টরন্টোর কনস্যুলেট অফিসের অগ্রগতি এবং জনবান্ধব সেবার সংস্কৃতি গড়ে তোলায় কনস্যুলেটকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা সামান্য সহযোগিতার জন্যই হাইকমিশন বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করেন। সেখানে কেউ তাদের কথা শুনবে- এর বেশি প্রবাসীরা কিছুই চান না।